ডেস্ক নিউজঃ- চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলীতে নিখোঁজের সাত দিন পর ডোবা থেকে আবেদা সুলতানা আইনীন আঁখির (১১) বস্তাবন্দি অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পিবিআই। স্থানীয় সবজি বিক্রেতা মো. রুবেলকে (৩০) আটকের পর তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আজ বুধবার ভোরে লাশটি উদ্ধার করা হয়। আঁখি পাহাড়তলীর কাজীরদীঘি নূর ভবনের মো. আলমের মেয়ে ও স্থানীয় সরাইপাড়া হাজি আব্দুল আলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ছিল। পরে নিহতের মা বিবি ফাতেমার মামলায় রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি একই এলাকার মৃত আব্দুল নূরের ছেলে। তাঁর দুই সন্তান রয়েছে। পিবিআই পরিদর্শক ইলিয়াস খান এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, রুবেলের সঙ্গে আঁখির কথোপকথনের ভিডিও দেখে সন্দেহ হলে জিজ্ঞাসাবাদে প্রথমে বিভ্রান্ত করেন। পরে স্বীকার করেন, আঁখির বিড়াল ছানা পোষার লোভ কাজে লাগিয়ে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করেন। লাশের শরীরে একটি গেঞ্জি ছাড়া কিছুই ছিল না। পরে পিসি রোডের পাশে একটি নালা থেকে আঁখির স্যান্ডেল, কালো পায়জামা ও হিজাব উদ্ধার করা হয়। লাশের বস্তা লুকিয়ে রাখতে প্রতিদিন তার ওপর আবর্জনা ফেলতেন রুবেল। গত ২১ মার্চ আঁখি নিখোঁজ হয়। ওই ঘটনায় গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মো. রুবেলের নামে অপহরণ মামলা করেন শিশুটির মা। পিবিআই, মৃতের স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, বিড়াল ছানা পোষার শখ ছিল আঁখির। দাদির সঙ্গে তিন মাস আগে তরকারি কিনতে গেলে রাস্তায় বিড়াল ধরার চেষ্টা থেকে তার শখের কথা জানেন রুবেল এবং তখন থেকেই লক্ষ্যবস্তু করেন। রুবেলের কথা অনুযায়ী তার কাছ থেকে বিড়াল ছানা আনতে গিয়ে ২১ মার্চ নিখোঁজ হয় আঁখি। আজ তার লাশ উদ্ধারের খবরে জ্ঞান হারান মা। জ্ঞান ফিরলেই আহাজারি করছেন, ‘আমার ঝিরে (মেয়েকে) একটা নজর দেখান।’পিবিআই সূত্র জানায়, আঁখির গ্রামের বাড়ি ফেনীর ছাগলনাইয়ায়। তার মা ফাতেমা চট্টগ্রাম নগরের অলঙ্কার এলাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। বাবা মো. আলম ঢাকার আশুলিয়ায় পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। সেখানে তিনি আরেকটি বিয়ে করেছেন। মা কর্মস্থলে গেলে দাদি সাহেনা বেগমের কাছে থাকত আঁখি। বাসার নিচতলায় একটি পরিবারের বিড়াল ছানা পোষা দেখে কয়েক মাস ধরে সে বিড়ালের আবদার করে আসছিল। পিবিআই পরিদর্শক ইলিয়াস খান বলেন, ‘আঁখি বিড়াল ছানা আনতে গেলে রুবেল বাসার কাছে তার ফুফুর চারতলা ভবনের একটি খালি ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়। ফ্ল্যাটটি দেখভালের জন্য চাবি তার কাছে ছিল। সেখানে নিয়ে শিশুটিকে ধর্ষণ করে। চিৎকার করায় শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ বস্তায় ভরে ফেলে দেয়।’ আঁখির চাচা আল আমিন সমকালকে জানান, স্কুল থেকে ফিরে হাত-মুখ ধুয়ে অদূরেই এক নারীর কাছে আরবি পড়ার জন্য বাসা থেকে বের হয় আঁখি। এরপর দীর্ঘক্ষণেও না ফিরলে খুঁজতে বের হলে ওই নারী জানান– আঁখি তাঁর কাছে পড়তে আসেনি। এরপর সম্ভাব্য সবখানে খুঁজে না পেয়ে রাতে থানায় জিডি করা হয়। এর মধ্যে আঁখির এক বান্ধবী জানায়– রুবেলের কাছে বিড়াল ছানা আনতে গিয়েছিল আঁখি। তখন তারা রুবেলের বাসায় যায়। আল আমিন বলেন, ‘বাসায় রুবেল ছিলেন না। স্ত্রী ফোন করে ডেকে আনেন। কিন্তু আঁখি আসেনি জানান রুবেল এবং আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে আঁখিকে খোঁজাখুঁজি করেন। তখনও আমরা বুঝতে পারিনি, রুবেলই আমার ভাতিজিকে খুন করেছে।’ এদিকে, আঁখি নিখোঁজের দুদিন পর পাশের ভবনের একটি সিসিটিভি ফুটেজ পান স্বজনরা। সেখানে নিখোঁজের আগের দিন দুপুর পৌনে ১২টার দিকে রুবেলের সঙ্গে তাকে কথা বলতে দেখা যায়। সন্দেহ হলে পরিবারের সদস্যরা পাহাড়তলী থানায় যান। পুলিশ রুবেলকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়। মঙ্গলবার আদালতে রুবেলের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করলে পিবিআই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে খুনের রহস্য উদ্ঘাটন করে। পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা না নেওয়ার অভিযোগ: শিশুটির লাশ উদ্ধারের সময় মা ফাতেমা বলতে থাকেন, ‘মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার পর থানায় গিয়েছিলাম। আমি বারবার বলেছি, রুবেলকে সন্দেহ হয়। সে আমাকে দেখলে হাসে। থানার এসআই দুলাল ও মনিরকেও বলেছি। তাঁরা আমাকে বলেছেন– আমার মেয়ে নাকি প্রেম করে। রুবেল নাকি ভালো ছেলে। তাঁরা আমার কথার গুরুত্ব দেননি। মামলা নেননি, ঠাট্টা-উপহাস করেছেন। পুলিশ আমার মেয়েকে খুঁজলে এ ঘটনা ঘটত না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার মেয়ে বিড়ালের জন্য পাগল ছিল। ঘটনার দু-তিন দিন আগে এক বান্ধবী বিড়াল কিনেছে জানিয়ে আমার কাছে বিড়াল ছানার আবদার করে। বেতন পেলে কিনে দিতে চেয়েছিলাম। তখন সে বলেছিল– এক তরকারি বিক্রেতা পরিচিত লোকের কাছ থেকে বিড়াল ছানা এনে দেবেন বলেছেন। আমি তাকে অপরিচিত লোকের কাছ থেকে নিতে নিষেধ করেছিলাম।’এ বিষয়ে পাহাড়তলী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান সমকালকে জানান, নিখোঁজ জিডি তাঁরা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করেছেন। এ জন্যই রুবেলকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু কিছু না পাওয়ায় মায়ের জিম্মায় তাঁকে ছেড়ে দিলেও নজরদারিতে রাখা হয়। এ বিষয়ে থানায় কেউ মামলা করতে আসেননি বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে, আঁখি হত্যার প্রতিবাদে নগরের সাগরিকা মোড়ে আজ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন সরাইপাড়া হাজি আব্দুল আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ক্ষোভে ফুঁসছেন স্থানীয়রা। তাঁরা রুবেলের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন।