ডেস্ক নিউজঃ-
পাবনা জেলার পাকশির ছেলে মো. রাজু আহমেদ। তিন পদ্মা সেতুর রেল লাইনে কয়েক বছর ধরে কাজ করছেন। অনেক ঝড় ঝাপটা গেলেও রেল লাইন ও প্ল্যাটফর্ম নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকেনি একদিনের জন্যও। পুরো সময়টা পদ্মা রেল লাইনের কাজে যুক্ত ছিলেন এই শ্রমিক। তাই নদীর ওপার থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে এপারে ট্রেন আসতে দেখে অন্যদের মতো তিনিও অনেক খুশি ও আনন্দিত। তার সহকর্মী মো. হাসান। তিনিও বেশ খুশি। পদ্মার ভাঙ্গা প্রান্ত থেকে মাওয়া পর্যন্ত ট্রেন আসতে দেখে আনন্দের শেষ নেই তার চোখে মুখে। সহকর্মীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ট্রেন আসতে দেখেছেন আর খোশ গল্পে মেতে উঠেছিলেন। এই মুহূর্ত ভোলার মত নয় বলে জানান এই শ্রমিক।
মো. হাসান সোনালীনিউজকে বলেন, ‘আসলে অনেক ভালো লাগছে। আমাদের দেশ যে উন্নত হইছে এটা তার প্রমাণ। রেল সেতু পেরিয়ে এই ট্রেন এখানে আসছে, দেখেই ভালো লাগতেছে। এতদিন ধরে এখানে কষ্ট করে কাজ করেছি। পারিশ্রমিকও নিয়েছি। কিন্তু এই কাজের স্বার্থকতা আজকে পেলাম। এই ট্রেন দেখে কাজের সব স্বার্থকতা পেয়ে গেলাম। খুব ভালো লাগলো। এই আনন্দ বোঝানো যাবে না।’মো. রাজু আহমেদ বলেন, ‘এতদিন নিজের হাতে কাজ করছি এই প্ল্যাটফর্মে। আজকে উদ্বোধন হলো, ট্রেনও আসলো। মন্ত্রী সাহেবরা আসছেন। এটা দেখে খুব ভালো লাগছে। হ্যাপি ফিল করছি। যা প্রকাশ করা যাচ্ছে না।’এদিকে ট্রেনে বসে সোনালীনিউজের সঙ্গে কথা বলেন সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরী। তিনি বলেন, পুরো দক্ষিণ বঙ্গের উন্নয়ন হবে এই রেল সংযোগের মাধ্যমে। ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরিয়তপুরসহ আশ- পাশের এলাকার মানুষ কম খরচে তাদের কৃষি পণ্য রাজধানীতে নিয়ে যেতে পারবেন। এসব এলাকায় কৃষি পণ্য অনেক হয়। বিশেষ করে শীত মৌসুমে। তাই রেলের মাধ্যমে পণ্য রাজধানীতে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে আবার তারা ঢাকায় ফিরেও আসতে পারবে। তিনি বলেন, এই অঞ্চলে কল কারখানা কম। কিন্তু এখন তা ধীরে ধীরে তৈরির কাজ চলছে। অনেকে জমি জমা কিনে ফেলেছেন। অনেকে কিনছেন। তবে পুরোটাই একটি নিয়মের মধ্য দিয়ে হবে। একটি শিল্প জোন হবে এখানে। শিল্প জোন যাতে অগোছালো না হয় সেদিকেও লক্ষ রাখা হচ্ছে। গ্যাস সংযোগ যেহেতু এখানে আসতেছে তাই আশা করি দ্রুতই এইসব এলাকায় কল কারখানাও নির্মাণ হবে।
পুরাতন প্ল্যাটফর্মটা ভাঙ্গা ইউনিয়নের তুজারপুর ইউনিয়নে পরেছে। সেই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান পরিমল চন্দ্র দাস সোনালীনিউজকে বলেন, এখান থেকে রাজশাহীতে একটি মেইল ট্রেন ছেড়ে যায়। দুইটি লোকাল ট্রেন ছেড়ে যায় রাজবাড়ীতে। এখন নতুন একটি মাইলফলক হলো এখানে। ঢাকায়ও যাওয়া যাবে ট্রেনে করে। আপাতত মাওয়া পর্যন্ত হলেও আশা করি খুব দ্রুতই আমরা ঢাকায় যেতে পারবো। স্থানীয় শিক্ষার্থী আহমেদ সুমন জানান, ঢাকায় পড়াশুনা করতাম। ছুটি হলে বাড়িতে আসতে ইচ্ছে করতো না। বর্ষায় বাবা মা আসতে বারণ করতেন। নদী উত্তাল থাকতো তাই। কিন্তু এখন আর সেই সমস্যা থাকলো না। চাইলেই বাড়ি আসতে পারবো। ইতোমধ্যে বাসে করে আসা শুরু হয়েছে। সামনে ট্রেনেও আসবো। এটা আমাদের গর্ব। ভাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা আলমগীর বলেন, দীর্ঘদিনের অপেক্ষা আমাদের পূরণ হতে চলেছে। এটা হয়তো মাওয়া পর্যন্ত, কিন্তু কিছুদিন পরে আমরা ঢাকা পর্যন্ত যেতে পারবো। এটা চিন্তা করেই আমাদের গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। কতটা কষ্ট করেছি আমরা তা বলে বোঝানো যাবে না।মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) দুপুর ১টা ১০ মিনিটে ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ফিতা কেটে বিশেষ ট্রেনটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। এরপর ১টা ১৫ মিনিটে বিশেষ ট্রেনটি চলতে শুরু করে। মাওয়া প্রান্তে গিয়ে ট্রেন থামে ৩টা ১৫ মিনিটে।
ট্রেনটির বিশেষ বগিতে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের সঙ্গে যাত্রা করেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নুরে আলম লিটন চৌধুরী, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস সোবহান গোলাপ, শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু, শরীয়তপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক, ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী, পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের প্রধান সমন্বয়ক মেজর জেনারেল একেএকম রেজাউল মজিদ, ডেপুটি সমন্বয়ক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আবুল কালাম আজাদ, প্রকল্প ব্যবস্থাপক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাইদ আহমেদসহ ফরিদুপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদারসহ আরো অনেকে।
এ সময় পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের ৪২ নম্বর পিয়ার ও পদ্মা সেতু পেরিয়ে মাওয়া প্রান্তের ১ নম্বর পিয়ারের কাছে আতশবাজি ফাটিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা হয়।