ডেস্ক নিউজঃ-
সরকার গার্মেন্টস শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে কোন প্রকার সুবিধা প্রদানের কথা ঘোষণা করেন কিংবা নাইবা করেন, এতে কোন অভিমান-অভিযোগ নেই পোশাক শ্রমিকদের। তবে যাদের কারখানায় পোশাক শ্রমিকরা মাথার গাম পায়ে ফেলে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে সেই সব কারখানার মালিকদের কাছে কোনো দয়া বা করুণার পাত্র হয়ে না, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বুঝে শ্রমিকদের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের রেশনিং সুবিধা প্রদানে প্রতিশ্রুতি ঘোষণা চান গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের হাজার-হাজার পোশাক শ্রমিকরা। জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে মোটা চালের দাম বেড়েছে ১৭ শতাংশ। এ ছাড়া ডাল ১০০, আটা ১১৩, খোলা সয়াবিন তেল ১১০ ও ডিমের দাম ৬৭ শতাংশ বেড়েছে। এর বাইরে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পরিবহনের ভাড়া বেড়েছে ২২ শতাংশ। দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুৎ ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পোশাকশ্রমিকের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। এমতাবস্থায় তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য রেশনিং সুবিধা চালু করা অত্যন্ত সময় উপযোগী এবং জরুরী বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরেজমিনে, গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের ভোগরা বাইপাস, টঙ্গী, কোনাবাড়ী, পল্লী বিদ্যুৎ, মাওনা ও জৈনাবাজার এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন শিল্প কারখানায় কর্মরত হাজার-হাজার শ্রমিক ও কর্মচারীদের মধ্যে একটা নিরব কষ্ট ও আর্তনাদ চলছে। বর্তমান বাজারে খাদ্য সামগ্রী ও ওষুধের দাম যে পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাতে করে সব চেয়ে বেশি অভাব অনাটনের জাতাকলে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে শ্রমিক শ্রেণির মানুষ। এ অঞ্চলের শ্রমিকদের অভিযোগ, বর্তমান সরকার গেল ১৪ বছরে দফায়-দফায় সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা বৃদ্ধি করেছেন। অথচ দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত ৪০ লাখ শ্রমিকরা নিম্নমুখী বেতন দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে চলতে পারছে না এটা নিয়ে কেউ একটু গভীর ভাবে চিন্তা করছেন না।এ দিকে শ্রমিকরা অভিযোগ করে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, যাদের কারখানায় জীবনের সর্বোচ্চ শ্রম দিয়ে বছরের পর বছর দিন রাত সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছেন। সেসব কারখানার মালিকরাও কোন দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছেন না। কারখানা মালিকরা শুধু নিজেদের মুনাফা অর্জনে ব্যস্ত।
এ শিল্প অঞ্চলের শ্রমিকরা আরও বলছেন, কবে মজুরি বোর্ড বসবে কবে বেতন বৃদ্ধি পাবে এই কথা নিয়ে তারা আর ভাবছেন না।এটা তকদিরের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। তবে রমজান মাসে এই সময়টাতে গার্মেন্টস শ্রমিকরা সামান্য ভর্তুকি দিয়ে যেনো শ্রমিকদের জন্য নিত্যপণ্যের রেশনিং সুবিধা প্রদান করেন এর প্রতিশ্রুতি ঘোষণা চান। তাহলে কিছুটা হলেও শ্রমিক পরিবারে স্বস্তি ফিরে আসবে। গাজীপুরের অন্যতম শিল্প গ্রুপ পলমল গ্রুপে কাজ করেন পোশাক শ্রমিক বিউটি আক্তার। তিনি এক সাক্ষাৎকারে সোনালী নিউজকে জানান, তিনি প্রায় দীর্ঘ ৫ বছর যাবত অপারেটর পদে কাজ করছেন। পাঁচ বছর আগেও তার যে বেতন ছিলো। এখনো তার বেতন সেই রয়েছে। অথচ এই পাঁচ বছর যে ভাবে বাজারে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে সংসার পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছেন। এখন মোটা চাল আর পাতলা ডাল খেয়ে চলতেই নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, কারখানা মালিকরা রেশন দিলে আমগরে অনেক উপকার হইতো। গাজীপুরের আরেক শিল্প গ্রুপ ডিবিএল। এই গ্রুপে চাকরি করেন আরিফুল ইসলাম। তিনি একজন আয়রন ম্যান। তিনি সোনালী নিউজকে জানান, গেল পাঁচ বছরে তার বেতন বেড়েছে ৭০০ টাকা। অথচ সংসারে গেল পাঁচ বছরে বাজারে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তার সংসারে খরচ বেড়েছে ৫ হাজার টাকা। তিনি বলেন, এখন যে ভাবে পরিবার পরিচালনা করছেন এ ভাবে চলতে থাকলে এক টাকাও জমা রাখতে পারবেন না। ‘গার্মেন্টস মালিকরা একটু ভর্তুকি দিয়ে রেশন দিলে আমরা অভাব-অনটন থেকে মুক্তি পাইতাম।’
এদিকে পোশাক শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়নে কাজ করে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এবং যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোফাইন্যান্স অপরচুনিটিজের (এমএফও) যৌথ গবেষণায় তথ্য উঠে এসেছে, ধারাবাহিক ভাবে পোশাক শ্রমিকদের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির ফলে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের নির্ধারিত কাজের বাইরেও অতিরিক্ত কাজ (ওভারটাইম) করতে হচ্ছে। এতে তাদের আয় কিছুটা বাড়ছে। তারপরও মাসের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।