নিজস্ব প্রতিবেদকঃ-
কনের সাজে শাকিলা ও নয়নতারা
দুই মেয়ের নিকাহ নামায় ‘পিতার’ কলামেও স্বাক্ষর করেন জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান।
পিতার দায়িত্ব নিয়ে জাকজমকপূর্ণ আয়োজনে অভিবাবকহীন দুই মেয়ের বিয়ে দিলেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক।
তিন শতাধিক বিশিষ্টজনের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার আনন্দঘন পরিবেশে অনুষ্ঠিত এই বিয়ের পাত্রীরা হলেন, শাকিলা ও নয়নতারা। মা-বাবা কিংবা আত্নীয়ের ছছায়া ছাড়াই যারা জন্মের পর থেকে বেড়ে উঠেছেন সরকারি বেবি হোম আর শিশু পরিবারে।
কিন্তু সেসব আশ্রয়ের আছে নির্দিষ্ট মেয়াদ, তা ফুরিয়ে আসায় তাদের দ্বায়িত্ব নিলেন জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান।
পিতার দায়িত্ব নিয়ে জাকজমকপূর্ণ আয়োজনে অভিবাবকহীন দুই মেয়ের বিয়ে দিলেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক।
তিন শতাধিক বিশিষ্টজনের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার আনন্দঘন পরিবেশে অনুষ্ঠিত এই বিয়ের পাত্রীরা হলেন, শাকিলা ও নয়নতারা। মা-বাবা কিংবা আত্নীয়ের ছছায়া ছাড়াই যারা জন্মের পর থেকে বেড়ে উঠেছেন সরকারি বেবি হোম আর শিশু পরিবারে।
কিন্তু সেসব আশ্রয়ের আছে নির্দিষ্ট মেয়াদ, তা ফুরিয়ে আসায় তাদের দ্বায়িত্ব নিলেন জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান।
তিনি জানান, শিশু বয়সেই পৃথক পৃথক স্থান থেকে শাকিলা ও নয়নতারাকে উদ্ধার করে সিলেট বেবি হোমে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই তারা সাত বছর পর্যন্ত থাকে। এরপর তাদের ঠাঁই হয় সিলেট শিশু পরিবারে। সেখানেই তাদের বড় হয়ে উঠা।
কিন্তু বয়স ১৭ হয়ে যাওয়ার পর তাদেরকে ছাড়তে হয় শিশু পরিবার। সেখান থেকে দুই বছরের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ নিতে তারা আসে সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত মৌলভীবাজার এতিম ও প্রতিবন্ধি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে।
এদিকে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেও তাদের মেয়াদ শেষ হয়ে আসছিল। এরপর তারা কোথায় যাবে এ নিয়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষও ছিলেন দুঃশ্চিন্তাগস্থ। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক তাদের এই দুঃশ্চিন্তার অবসান করেন।
বর আল আমিন ও মো. সাব্বিরের সঙ্গে শাকিলা ও নয়নতারা
তিনি নিজেই দুই মেয়ের জন্যই পাত্র খুঁজে সব কিছুতে উপস্থিত থেকে বৃহস্পতিবার তাদের বিয়ে দেন। নিকাহ নামায় ‘পিতার’ কলামেও স্বাক্ষর করেন তিনি।
দুই মেয়ের মধ্যে শাকিলার বিয়ে হয় টিউবওয়েল মিস্ত্রী আল আমিনের সঙ্গে এবং নয়নতারার বিয়ে হয় সিএনজি অটো চালক মো. সাব্বিরের সঙ্গে।
মৌলভীবাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবী সাইফুল ইসলাম বাবুল বলেন, দুই মেয়ের গায়ে হলুদে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য নেছার আহমদ। আর বিয়েতে তিন শতাধিক অতিথির সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্যও। ছিলেন জেলার পুলিশ সুপার মো. জাকারিয়া, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা রহমান বাঁধনসহ প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকতারা।
অতিথিরা তাদের আর্শিবাদ ও দোয়া করেন, দেন উপহারও। একই সাথে এই দুই এতিম শিশুর জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকেও এক লক্ষ করে দুই লক্ষ টাকা উপহার দেওয়া হয় বলে জানান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক তানিয়া রহমান।
বিয়ের অনুষ্ঠানে আসা অতিথিরা তাদের আর্শিবাদ ও দোয়া করেন, দেন উপহারও।
জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার একেএম মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের বিয়েতে যাতে কোনো ধরনের কমতি না হয়, এজন্য অতিথিদের জন্য খাবারসহ সব আয়োজন করা হয়। জেলার সর্বস্তরের মানুষ এ বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে দুই কন্যার জন্য দোয়া করেছেন।
জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে দুই কন্যার প্রশিক্ষক মো. শামীমুর রহমান বলেন, তারা দুই বছর হল শিশু পরিবার থেকে এখানে এসেছে। এখানে নয়নতারা টেইলারিং ও বাটিক এবং শাকিলা টেইলারিং ও ড্রাইভিং শিখেছে।
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, “একজন পিতা তার কন্যাদের যেভাবে বিয়ে দেন, তেমনি একজন কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার মতো আমি তাদের বিয়ে দেই। সব নিয়ম ও আনুষ্ঠানিকতায় এ বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছি।”