ডেস্ক নিউজঃ-
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘ ধরে ভয়াবহ জনবল সংকট বিরাজ করছে। বিশেষ করে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণির মোট ১৬০টি পদের বিপরীতে ৪৭টি পদ শূণ্য থাকলেও দীর্ঘ অর্ধ যুগে তা পুরণ হয়নি। যে কারণে উপজেলাবাসীর স্বাস্থ্য সেবার একমাত্র প্রতিষ্ঠানটি খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে। ফলে এ সকল বিভাগে চিকিৎসা, দাপ্তরিক করণিক কাজ, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বাহিরে-ভিতরে পরিস্কার পরিছন্নতা, রান্না, নিরাপত্তা সকল বিষয়ে দুরঅবস্থা চলছে কয়েক বছর যাবত। আর দীর্ঘ সময়ে শূন্য পদ পূরণ না হওয়া স্বাস্থ্য সেবার নানা কাজে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রায় ৩ লক্ষাধিক উপজেলাবাসীকে।অবশ্য, শূণ্য পদে জনবল সংকট সামাল দিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগ কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্য কর্মীদের দিয়ে জোড়াতালি ভাবে কাজ করানো চেষ্টা করলেও উপজেলাবাসীর সার্বিক স্বাস্থ্য সেবার শৃংঙ্খলা দারুণ ভাবে ব্যহৃত হচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ আছে। তাড়াশ ৫০ শয্যা বিশিষ্ট্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটিতে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার পদ রয়েছে ১৭টি। যার মধ্যে জুনিয়ন কনসালন্টেট (সার্জারী), জুনিয়ন কনসালন্টেট (মেডিসিন), ডেন্টাল সার্জনের মোট ৩টি পদ রয়েছে। যা মধ্যে ৩টিই শূণ্য। পাশাপাশি আরো শূণ্য রয়েছে সহকারী সার্জন (নবসৃষ্ট) ৭টি পদের ৩টি পদ।
প্রথম শ্রেণির পরে স্বাস্থ্য সেবার অন্যান্য বিশেষ বিশেষ শাখায়ও জনবল সংকটও চরমে উঠেছে।এছাড়াও দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণির মোট ১৪৩টি পদের বিপরীতে আরো ৪১টি পদ দীর্ঘ অর্ধ যুগে ধরে শূণ্য। যেমন: তাড়াশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক, ক্যাশিয়ার, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ইপিআই), মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (রেডিও), সহকারী সেবক, পরিসংখ্যানবিদ এবং মালীর একটি করে পদ। যার প্রত্যেকটি শূণ্য। তবে তাড়াশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শূণ্য পদের বিবরণ এখানেই শেষ নয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ২টি, চিকিৎসা সহকারী ১টি, সিনিয়র ষ্টাফ নার্স ১টি, ওয়ার্ড বয় ১টি, কুক/মশালচী ১টি, নৈশ প্রহরী ১টি, অফিস সহকারী ৩টি পদের ২টি, স্বাস্থ্য পরির্দশক ২টি পদের ১টি, অফিস সহায়ক পদের ৪ টি পদের ৩টি, ঝাড়ুদার পদে ৫টির মধ্যে ৪ টি এবং স্বাস্থ্য সহকারী পদে ৩৫টির বিপরীতে ১২টিই শূণ্য। এ কারণে এসব পদের বিপরীতে কাজ করার লোক না থাকায় এ সকল শাখায় বর্তমানে চরম দুরাবস্থা বিরাজ করছে। বঞ্চিত হচ্ছে স্থানীয় জনগণের স্বাস্থ্য সেবা। যা প্রায় এক দশকেও পুরণ হয়নি। এতে করে বিশেষজ্ঞ ওই পদ গুলোর বিপরীতে জন সাধারণ যে সকল স্বাস্থ্য সেবা পাবার কথা তা পদ শূণ্যের কারণে সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে, তাড়াশ পৌর সদরের বাসিন্দা লুৎফর রহমান।
অপর দিকে তাড়াশ পূর্ব পাড়ার মাসুম বিল্লাহ্ জানান, মালীর পদ শূণ্য থাকায় বাগান বা নতুন গাছ না লাগানোর কারণে প্রচুর জায়গা পড়ে থাকলেও গাছের অভাবে খাঁ খাঁ করছে কমপ্লেক্স চত্ত্বর। পাশাপাশি গুল্টা গ্রামের সাথী খাতুন অভিযোগ করে বলেন, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ইপিআই), মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (রেডিও) বিভাগে রোগীরা জনবল সংকটের কারণে ওই সকল বিভাগে গিয়ে সেবা পাচ্ছেন না। বরং বিভাগ গুলো তালা বদ্ধ থাকে বেশির ভাগ সময়। এছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা শামীম হোসেন, শারমিন খাতুন, মাহবুর রহমান, হোসনেয়ারা, রাকিবুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা যায়, কিছু বিভাগে সেবা পেলেও অনেক বিভাগে জনবল সংকটের কারণে জনগণ সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন। বিশেষ করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিস্কার পরিছন্নতা, দর্শনীয় চত্ত্বর তৈরি, নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। অবশ্য, তাড়াশ ৫০ শয্যা বিশিষ্ট্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. মো. মনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, শূণ্য পদের কারণে বিভিন্ন শাখা থেকে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এনে শূণ্য স্থানে সাময়িক ভাবে কাজ করিয়ে সংকট সামাল দেওয়া হচ্ছে। সেই সাথে সিরাজগঞ্জ জেলা সির্ভিল সার্জন অফিসে শূণ্য পদের তালিকা পাঠানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ জেলা সির্ভিল সার্জন রামপদ রায় বলেন, তাড়াশ ৫০ শয্যা বিশিষ্ট্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শূণ্য পদের তালিকা পাওয়ার পর তা ঢাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।