ডেস্ক নিউজ;-
গ্যাপ মেনে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে গত কয়েক বছর ধরে ইউরোপের দেশগুলোতে ফল ও সবজি রফতানি হচ্ছে। বিগত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ইউরোপে সবজি রফতানি হয়েছে ১ হাজার ৩০৭ মেট্রিক টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে তা দাড়ায় ১ হাজার ৯১৩ টনে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে হয়েছে ১ হাজার ২০৭ টন।
এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ফল রফতানি হয়েছে ১ হাজার ২০৩ মেট্রিক টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে তা হয়েছে ৩ হাজার ১৯৯ টন। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে তা হয়েছে ১ হাজার ৬৫৯ টন। সবচেয়ে বেশি রফতানি হচ্ছে যুক্তরাজ্যে। মোট ৫২ ধরনের সবজি রফতানি হচ্ছে ইউরোপে। আর ফল রফতানি হচ্ছে ৪২ ধরনের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউরোপে বাংলাদেশের কৃষি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে ফল ও সবজির বাজারে অপার সম্ভাবনা। এ দুটি কৃষিপণ্য রফতানি করতে হলে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানের ল্যাবরেটরী প্রয়োজন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই শর্ত জুড়ে দেয়ার পর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ২০১২-২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে ১৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশ ফাইটোসেনেটারি সামর্থ শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীর শ্যামপুরে সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউস নির্মাণ করা হয়। সেখানে ল্যাবের যন্ত্রপাতিও আনা হয়। ২০১৭ সালের ১৬ মে ইউরোপে আম রফতানির জন্য এই ল্যাব আংশিকভাবে চালু করা হয়। তবে দক্ষ জনবলের অভাবে ফল ও সবজি মোড়কজাত করার আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এই প্যাকিং হাউসটি পুরোদমে চালু করা যায়নি।
যাদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল তারাও বদলি হয়ে বিভিন্ন জায়গায় চলে যান। ফলে কোনো মতে চলতে থাকে ল্যাবের কার্যক্রম। যেহেতু ইউরোপের বাজারে ফল ও সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, তাই ২০২১ সালের জুন থেকে ১৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজে স্থাপিত উদ্ভিদ সংগনিরোধ ল্যাবরেটরিকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ল্যাবরেটরিতে রূপান্তর’ শীর্ষক আরেকটি প্রকল্প হাতে নেয় কৃষি মন্ত্রণালয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটির পরিচালক ড. জগত চাঁদ মালাকার জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষে স্থাপিত এই ল্যাবটির অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রায় সিংহভাগই সম্পন্ন হয়েছে। ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্যাকিং হাউজের কাজ শেষ হওয়ার কথা। সবকিছু ঠিক থাকলে এর আগেই সেটা শেষ হতে পারে বলে আশা করছি। এর পর কৃষিপণ্য রফতানিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে। সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউজের ল্যাব টেস্টের ওপর বিদেশের বাজার জয় করা নির্ভর করছে। ফলে সব কাজ অত্যন্ত যত্ম ও স্বচ্ছতার সঙ্গে করা হচ্ছে। কোনো রকম ত্রুটি রাখা হচ্ছে না। কোয়ারেন্টাইন কর্মকর্তাসহ মোট ১৮০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আর আগের যন্ত্রপাতি ও কেমিক্যাল যা রয়েছে, সেগুলোও এই ল্যাবে যুক্ত হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ সবজি উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়; কাঁঠাল উৎপাদনে দ্বিতীয়, আম উৎপাদনে সপ্তম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম এবং পেঁপে উৎপাদনে তৃতীয়। দেশে বছরে সবজি উৎপাদন হয় প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ টন এবং ফল উৎপাদন হয় প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের চাহিদা মিটিয়ে অনেক ফল ও সবজি অতিরিক্ত থাকে বা নষ্ট হয়ে যায়। মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশী ফল ও সবজির বড় বাজার রয়েছে। ফল ও সবজি রফতানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করা সম্ভব। ইউরোপের দেশগুলোতে ফল ও সবজি রফতানি করতে হলে তাদের কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। খাদ্য নিরাপত্তা, প্লান্ট কোয়ারেন্টিন ও প্লান্ট প্রটেকশনের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয়। বিশেষ করে গুড এগ্রিকালচার প্রাকটিস বা গ্যাপ মেনে চলতে হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ইউরোপের যে কোনো দেশে সবজি ও ফলমূল রফতানির জন্য নিয়মিতই সালমোনেলা সহ যে কোনো ধরনের দূষণ, কীটনাশকের রেসিডিউ, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের সংক্রমণ রয়েছে কিনা বিভিন্ন ধরনের এমআরএল পরীক্ষা করা যাবে এখানে। আগের কেনা যন্ত্রের পাশাপাশি ল্যাবরেটরিতে আবারো মাইকোলজি, ব্যাকটেরিওলজি, ভাইরোলজি, নেমাটোলজি, মাইক্রোবায়াল পরীক্ষা নীরিক্ষার জন্য যন্ত্রপাতি কেনার পরিকল্পনা করা হয়েছে।